ক্রীড়া ডেস্কঃ সোনারদেশ২৪:
আলোচনাটা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে। নিয়মিত খেলার বাইরে থাকেন। বিপিএল খেলার আগে ঢাকা লিগ খেলেছেন আট মাস হয়ে গেলো। অথচ বিপিএলে ফিরে একের পর এক ম্যাজিক দেখাচ্ছেন। তার হাত ধরে চার ম্যাচে চার জয় সিলেট স্ট্রাইকার্সের। মাশরাফি ম্যাজিক? মাশরাফি কৃতিত্ব দিলেন গোটা দলের, নাহ (একার ম্যাজিক নয়)। আমাদের দলের সবাই চেষ্টা করছে শুরু থেকে। আমরা অনুশীলন থেকে শৃঙ্খলা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। ওটাই মাঠে কাজে আসছে।
তরুণ ও সিনিয়র ক্রিকেটারের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কথাও বলেছেন সিলেটের অধিনায়ক। এজন্য প্লেয়ার্স ড্রাফট কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বোঝা গেল তার কণ্ঠে, আমরা মুশফিকুর রহিমকে টার্গেট করেছিলাম। তাকে আমরা পেয়ে গেছি। এরপর তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসানদেরকে নিয়েছি। ভাগ্য ভালো অন্যরা কেউ নেয়নি। আমরা শুরুতেই ওদেরকে পেয়ে যাওয়ায় পরিকল্পনায় সফল হয়েছি।
যে পরিকল্পনায় তৌহিদ হৃদয় ও জাকির হাসানকে নেওয়া, সিলেট তাতে শতভাগ সফল। দুই তরুণই আলো ছড়িয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন গোটা দলকে। মাশরাফি তাদেরকে দলে নিয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। যেভাবে খেলতে চান সেভাবে খেলার লাইসেন্স দিয়েছেন। সঙ্গে মুশফিকুর রহিমও দিয়েছেন ছাড়। মুশফিক বিপিএলে এবং টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিয়মিত চারে ব্যাটিং করেন। সেখানে এবার হৃদয় ও জাকিরকে সুযোগ করে দিতে পাঁচে ব্যাটিং করছেন। মাশরাফির বক্তব্য, মুশফিক আমাদের কাজটা সহজ করে দিয়েছে। সঙ্গে দুজনকে স্বাধীনতা দেওয়ার কৌশল নিয়ে সিলেটের অধিনায়ক বলেছেন, আমাদের তরুণ ক্রিকেটার যারা আছে, ওদেরকে চাপে না ফেলে এই স্বাধীনতা দেওয়া আছে যে, ওরা যেভাবে চায় নিজেদের মেলে ধরতে পারে। ওদেরকে যেটা বলা হয়েছে যে, উইকেট বুঝে টি–টোয়েন্টি যেভাবে খেলা উচিত, সেভাবে যেন খেলে। ওই স্বাধীনতা ওদের শুরু থেকেই দিয়েছি। আমাদের থেকে ওদের ওপর কোনো চাপ নেই।
আলাদা করে মুশফিককে নিয়ে মাশরাফির অভিমত, এখানে মুশফিক অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। মুশফিক সাধারণত চারে খেলে। কিন্তু সে নমনীয় ছিল। নাহলে আসলে এটা কঠিন হতো। সিদ্ধান্তটি নিতে সে নিজেই সহজ করে দিয়েছিল। ডানহাতি–বাঁহাতি কম্বিনেশন রাখার পরামর্শও মুশফিকই দিয়েছিল। এটা মুশফিকের জন্যই সম্ভব হয়েছে এবং সেই এখানে নেতৃত্ব দিয়েছে সত্যি কথা বলতে।
হৃদয় পরপর তিন ম্যাচে তিন ফিফটি পেয়েছেন। সাহস নিয়ে, সামর্থ্য দেখিয়ে রান তুলছেন অনায়াসে। ৬৬ গড় ও ১৬৬ স্ট্রাইক রেটে ১৯৫ রান! সবশেষ ম্যাচে ৮৪ রানে আউট হয়েছেন। সিলেটের চার জয়ের তিনটিরই নায়ক এ ব্যাটম্যান। এছাড়া জাকির ব্যাটিং করছেন ১৭৫ স্ট্রাইক রেটে। যেখানে তার ইনিংসগুলো হচ্ছে এরকম– ২১ বলে ২৭, ১০ বলে ২০, ১৮ বলে ৪৩ রান। টি–টোয়েন্টিতে ছোট কিন্তু কার্যকরী ইনিংসগুলোই বড় পার্থক্য গড়ে দেয়।
দুজনকে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত মাশরাফি, হৃদয়কে আমরা ওর মতো ছেড়ে দিয়েছি। আগের ম্যাচে দেখুন, উইকেটে গিয়ে প্রথম বলে ছক্কা মেরেছে। আমি ওকে পুরো ব্যাকআপ দিয়েছি। ওই শটে যদি আউট হতো, আমরা ওকে কিছুই বলতাম না। এভাবে পাশে থাকা প্রয়োজন। আমাদের দল থেকে, বিশেষ করে আমি যতক্ষণ আছি, ওই সুযোগটা দিয়েছি যে, ও যেন যেভাবে চায়, সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারে। একটা ক্রিকেটার প্রতিদিন ভালো খেলবে না। আমি নিশ্চিত, হৃদয় যেভাবে খেলছে, নিজের সামর্থ্য সম্পর্কে নিজেও বুঝতে পারছে। অন্যদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওর নিজে বোঝা যে একটা করতে পারে। এই সুযোগগুলো দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ‘জাকিরকে আগের দিন আমরা বলেছি জুটি গড়তে। কিন্তু ও উইকেটে গিয়ে একটি চার মারলো, ছয় মারলো। ওর কাছে মনে হয়েছে, উইকেট ভালো, সুযোগ নিতে পারবে, আমরাও ব্যাকআপ দিয়েছি। উইকেট খারাপ হলে যদি ১০ বলে ১০ করে, তাহলেও সমস্যা নেই। আমার কথা হচ্ছে, এই জায়গাটা তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ক্রিকেটারদের থেকে সেরাটা বের করে আনতে স্বাধীনতা দেওয়া, উপরে ব্যাটিং করার সুযোগ করে দেওয়ার বিকল্প দেখেন না মাশরাফি, আমাদের দেশে তরুণ ক্রিকেটারদের ওই সুযোগটাই কম থাকে, সাবলীল যে খেলাটা, সেটার। বাইরে যদি দেখেন, সুযোগ পায়। তারা জানে যে কী করতে চাচ্ছে একটা তরুণ ক্রিকেটারকে নিয়ে। আমার কাছে মনে হয়, আমরা জানি না আমাদের তরুণদের আমরা কীভাবে দেখতে চাই সামনে তাকিয়ে। আমি সবসময় বলে আসছি, ভালো ক্রিকেটার তৈরি করতে গেলে ভালো কোচ প্রয়োজন। একটা ক্রিকেটারকে কীভাবে সেট করবে, তার সামর্থ্য কতটুকু, এটা কোচদেরও বুঝতে হবে।